ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইতিহাসের পাতায় না থাকা বাংলার দামাল ছেলেদের কাহিনী।

ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামে একজন উল্খেযোগ্য সশস্ত্র বিপ্লবীর নাম অনন্ত সিংহ। 1903 সালের 1লা ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পুণ্যভূমিতে তাঁর জন্ম হয়। স্বল্প প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অধিকারী অনন্ত সিংহ অত্যন্ত সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত, কর্মোদ্যোগী ছিলেন। 1921 সালে তাঁর উদ্যোগ তাঁর নিজের স্কুলের ছেলেরা কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলোনে যোগ দেয়। 1923 সালের 14ই ডিসেম্বর বিপ্লবের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের বাটালি পাহাড়ে আসাম-বাংলার রেলওয়ে কোম্পানির সরকারি অর্থ লুঠ করেন। 1924 সালে বিপ্লবী কাজকর্মের জন্য তাঁর চার বছরের কারাদণ্ড হয়। 1930 সালে মাসটার দা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিখ্যাত চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে বীর বিপ্লবী অনন্ত সিংহ একটি ছোট দলের নেতৃত্ব দেন। 1930 সালের 28 শে জুন কলকাতা পুলিশ কমিশনার ল্যোমানের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। বিপ্লবী শরৎচন্দ্র বসুর নির্দেশে জেলের ভিতরে সুড়ঙ্গ তৈরি করে বিস্ফোরোক দিয়ে জেল উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং ডিনামাইট পাতার সময় ধরা পড়েছিলেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের মামলার বিচারে অনন্ত সিংহের সেলুলার জেলে দীপান্তর হয়।

1946 সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন। পরে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। কিছুদিন তিনি চলচ্চিত্র ও মোটর গাড়ির ব্যবসা করেন। তাঁর প্রযোজিত ভানু বন্দোপাধ্যায় অভিনীত বিখ্যাত চলচ্চিত্র যোমালয়ে জীবন্ত মানুষ। 1959 সালে খাদ্য আন্দোলনে অসংখ্য অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে অনন্ত সিংহ দেশের দরিদ্র মানুষদের সেবার জন্য সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সেবায় নিযুক্ত হন। 1960 সালে কলকাতায় ধারাবাহিক ব্যঙ্ক ডাকাতির পরিকল্পনা করার অভিযোগে 1969 থেকে 1977 এই আট বছর তিনি জেল খাটেন।

বাংলার দামাল ছেলে অনন্ত সিংহ শেষ জীবনে বিতর্কিত চরিত্র ছিলেন ঠিকই কিন্তু দেশের সর্বহারা, নিপীড়িত অনাহারে দিন যাপন করা মানুষের জন্যই তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেন। 1979 সালের 25 শে জানুয়ারি অনন্ত সিংহ মৃত্যুবরণ করেন।

Comments

comments

এই সংক্রান্ত আরও খবর