অমর সৈনিক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু

২৩ শে জানুয়ারি, ভারতের বীর সন্তান নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন। আজকের বাংলা তথা ভারতবর্ষে তাঁর আবির্ভাব খুব প্রয়োজনীয়। ঐক্যবধ্য ভারতবর্ষকে শাসনের নামে প্রতিদিন যারা ধর্মকে কেন্দ্র করে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নেতাজীর মত সত্যিকারের নায়কের খুব প্রয়োজন আজ। জানি না কলি যুগের কোন ‘কল্কি’ অবতারের আবির্ভাব হবে কিনা, যিনি এই শাসক নামক দানবের কবল থেকে অলৌকিক শক্তি দিয়ে রক্ষা করবেন আমাদের মাতৃভূমিকে।

আজ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর স্মৃতির উদ্দ্যেশে ছোটদের জন্য এই ভারতীয় নায়কের বীরত্ব স্ম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরলাম।

উড়িষ্যার কটক শহরে বসু পরিবারে তাঁর জণ্ম হয়। পিতা জানকী নাথ বসু এবং মাতা প্রভাবতী দেবী।স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত সুভাষ চন্দ্র বসু ছাত্রাবস্থা থেকে ইংরেজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন। ১৯০২ সালের জানুয়ারিতে তিনি কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় বিদ্যালয়ে (বর্তমানে স্টুয়ার্ট উচ্চ বিদ্যালয়) ভর্তি হন। ১৯১৩ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যাল্যের স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন।
বাবার ইচ্ছায় নেতাজী ইংলণ্ডে গিয়েছিলেন ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে। ইংরাজীতে সর্ব্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার অধিকার করেন। কিন্তু সাহসী সুভাষ, যিনি ছিলেন দেশমাতার একনিষ্ঠ সন্তান, ইংরেজদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ১৯২১ সালের এপ্রিল মাসে সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করে ভারতে ফিরে এসে সক্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। পরে তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন এবং যুব শাখার দলের সভাপতি।

আরও পডু়ন:

হিসাবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেস ছিল বিশাল সংগঠন। সুভাষ চন্দ্র বসু কংগ্রেসে একজন শক্তিশালী নেতা হয়ে উঠেছিলেন।পর পর দুবার তিনি জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু কংগ্রেসে গান্ধীজীর অহিংস, ন্রমপন্থী মনভাবের সাথে তাঁর মতাদর্শের বিরোধীতা ছিল। ফলে কংগ্রেসের সভাপতিত্ব পদের নির্বাচনে অনেক বেশি ভোটে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস দলের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন।
১৯৩৯ সালের ২২ শে জুন সুভাষ চন্দ্র বসু অল ইন্ডিয়া ফরোয়ার্ড ব্লক নামে একটি দল সংগঠিত করেছিলেন।
পরবর্তীকালে ১৯৪০ সালে ভারত থেকে পালানোর আগে ব্রিটিশরা নেতাজীকে গৃহবন্দী করে রাখে। ব্রিটিশরা বহুবার নেতাজীকে কারারুদ্ধ করেছিলদ। তিনি ছদ্মবেশে পালিয়ে গিয়ে আফগানিস্তান ও মধ্য–এশিয়া হয়ে প্রথমে সোভিয়েত ইউনিয়ন তারপরে ১৯৪১ সালের ২রা এপ্রিল জার্মানের বার্লিনে পৌঁছেছিলেন। ১৯৪৩ সালের ২রা এপ্রিল জার্মান ত্যাগ করে সাবমেরিনে করে সিঙ্গাপুরে থেকে ১১ মে টোকিও যান। ১৯৪৩ জুলাই মাসে INA(Indian National Army) সংস্থাটির নিয়ন্ত্রন ভার আসে নেতাজীর হাতে। তিনি প্রবাসী ভারতীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন সংগঠিত করেছিলেন। আই.এন.এর একটি পৃথক মহিলা ইউনিট তৈরী হয়েছিল নেতাজীর উদ্যোগে।
এই ভাবে অত্যন্ত সাহস এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। আজ তিনি হয়ত নেই। কিন্তু প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে তিনি অমর।
ঠিক এমন একজন নায়কের আজ আমাদের বড় প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। প্রণাম ভারতমাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর সুভাষের শ্রীচরণে।

Comments

comments

এই সংক্রান্ত আরও খবর