অমূল্য রতনের সন্ধান মিলল বিদ্যাসাগর অলংকৃত কলকাতার সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে
কলকাতার ঐতিহ্যশালী সংস্কৃত কলেজ, বর্তমানের সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া সিন্দুকে মিলল শতাব্দীর ইতিহাস। ২০০ পুরানো সিন্দুক, তা খোলা অতি দুঃসাধ্য। চাবি তৈরি করেও চারটি চাবি দিয়ে সিন্দুক খুলতে ব্যর্থ হয়ে পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় শেষে সিন্দুকের নাটবল্টু খুলতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্য অনুযায়ী- মুখবন্ধ শীল্ড খাম পাওয়া গেছে যার উপরে লেখা আছে লিস্ট অব্ অ্যাসেটস্। সংস্কৃত কলেজের গুরুত্বপূর্ণ নথি এই খামের মধ্যে আছে। কি সেই নথি?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি হল “মুক্তকেশী দেবীর বিধবা ফান্ড” নামাঙ্কিত ফান্ডটি সংস্কৃত কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরেরে তৈরি বিধবাদের জন্য ফান্ড। বিধবাদের জন্য মাসিক ২ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছিল। আটজন বিধবার নাম উল্লেখ আছে এই নথিতে যাঁরা বিধবা ভাতা পেতেন। নথিটি ১৯৫৬ সালের।
তিনটি রূপোর পদক পাওয়া গেছে। দুটি গঙ্গামণি দেবী রূপোর পদক। সংস্কৃততে প্রথম স্থানাধিকারীকে সংস্কৃত কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজ মিলে “গঙ্গামণি দেবী” নামাঙ্কিত রূপোর পদক দিয়ে ভূষিত করা হত। আর একটি এ এন মুখার্জি রূপোর পদক, যা ইংরেজি ভাষার সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপককে দেওয়া হত। শ্রদ্ধেয় পূর্ণ চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯১৯ সালে এই পদক প্রাপ্ত হয়েছিলেন। অপরটি ১৯৬৫ সালের।
এছাড়াও মিলেছে ব্যাঙ্কের বই, পোস্ট অফিসের বই। সবমিলিয়ে ১৯৩০ সালের ৮৫ টি পাস বই মিলেছে সংস্কৃত কলেজের এই দুর্লভ সিন্দুকে, মনে করা হছে এখান থেকে স্কলারশিপের টাকা দেওয়া হত।
আরও মিলেছে ১৮২৯ থেকে আ৮৩২ সালের একটি অ্যাটেনডেন্স তালিকা যাতে রয়েছে ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়রে নাম, তখনও তিনি বিদ্যাসাগর নামে ভূষিত হননি। মহামহোপাধ্যায় উপাধি প্রাপ্তদের একটি তালিকা যাতে স্বাক্ষর আছে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।
সেই সময় কলকাতার সংস্কৃত কলেজ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পথপ্রদর্শনায় কতদূর পর্যন্ত সমাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন তার প্রমাণ রয়েছে এই সমস্ত নথিতে।
শত শত বছর ধরে বিদ্যাসাগর, রামমোহন, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রভৃতির ন্যায় মনিষীদের পদধূলিতে বার বার পবিত্র হয়েছে এই বঙ্গভূমি। সার্থক জনম আমার এই বঙ্গভূমিতে।