ঘুরে আসুন ভারতের হেরিটেজ ভিলেজ, জেনে নিন বিশদে
রঘুরাজপুর, সে একরকম জীবন্ত শিল্প মেলা। জীবন্ত! কেন? ওড়িশার আকর্ষণ পুরীর সমুদ্রের অস্থির, অবিশ্রান্ত, ভিন্ন রঙের ঢেউ আর সেই সমুদ্রতট থেকে মাত্র ১০ কি.মি দূরে শিল্পের ঢেউ তুলেছে রঘুরাজপুর গ্রাম।
১২০-১৪০ টি পটচিত্র শিল্পীর পরিবারের এই গ্রামটি আর্ট ভিলেজ নামে খ্যাত। গ্রামটিতে প্রবেশ করার সাথে সাথে বাড়ির প্রতিটি দেওয়ালে শিল্পীদের তুলির স্পর্শ বুঝিয়ে দেবে যে আপনি শিল্পের জীবন্ত সংগ্রহশালায় এসে পড়েছেন। ওড়িশার প্রাচীন পটচিত্র শিল্পের রক্ষক এই গ্রামটি।
পটচিত্র অর্থাৎ কাপড়ে আঁকা ছবি। তসর বা সুতির কাপড়ে প্রথমে আঠার প্রলেপ লাগানো হয় তারপরে প্রাকৃতিক বা জৈব রং ব্যাবহার করে রাধাকৃষ্ণ, জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা, দেবী দূর্গা, গণেশ, রাসলীলা, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি পৌরাণিক কাহিণী এবং লোকগাথার চিত্র আঁকা হয়।
তালপাতা, খেজুর পাতা, কাঠের তৈরি জিনিসের উপর, পাথরেরে উপর, কাঁচের বোতলের গায়ে, নারকেলের গায়ে, সুপারীর গায়ে, তালের আঁটির উপর নানান রং বেরঙের অভূতপূর্ব চিত্র এঁকেছেন এখানকার শিল্পীরা। এই গ্রামের প্রতিটি নারী এবং পুরুষ ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভায় প্রতিভান্বিত। গ্রামে প্রবেশ করার মুখে দুটি রাস্তা দুদিকে চলে গেছে। মাঝবরাবর রয়েছে গ্রামের মন্দির যার দেওয়ালগুলিতে অপূর্ব শিল্পের নিদর্শণ। প্রবেশ করার সাথে সাথে মনে হবে এ কোন শিল্প মেলাতে এসে পড়লাম, প্রতিটি বাড়ির দেওয়াল শিল্পীর ক্যানভাস। শিল্পীরা দর্শনার্থীদের তাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায় এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেন। শিল্পের উৎস এবং কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেন। শিল্পীরা তাদের তৈরী শিল্পকর্ম বিক্রীও করেন।
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ (ইনট্যাক/INTACH), ১৯৯৮ সালে রঘুরাজপুরের উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করে। এরপর ২০০০ সালে রঘুরাজপুরকে একটি ‘হেরিটেজ ভিলেজ’ হিসাবে ঘোষণা করেছে।
রঘুরাজপুরের শিল্প আন্তর্জাতিক স্তরে মর্যাদা লাভ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটক আসেন রঘুরাজপুর ভ্রমণে এবং এখানকার পটচিত্র কিনে নিয়ে যান।
রঘুরাজপুর গ্রামটি ভারতীয় সংস্কৃতিকে গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে।
কিভাবে যাবেন রঘুরাজপুরে
পুরী থেকে ১০-১২ কি,মি দূরত্বে রঘুরাজপুর অটো অথবা টোটো রিজার্ভ করে যাওয়া যায়। ভাড়া ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে(কম বেশী হতে পারে)।
এছাড়া পুরী বাস স্ট্যাণ্ড থেকে বাসে করে চন্দনপুরে নামতে হবে। সেখান থেকে ১৫ মিনিট হাঁটা পথ। অথবা রিকশা করে রঘুরাজপুরে যেতে হবে।
ভুবনেশ্বর থেকে রঘুরাজপুর NH-203 ধরে প্রায় ৫৫ কি.মি দূরে।