কয়েকদিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন রাঙা মাটির দেশ বড়ন্তি

রাঙা মাটির দেশ বড়ন্তি (Baranti)। বিভন্ন ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে বড়ন্তির সৌন্দর্য্য নানা রঙে ধরা দেয়। এ যেন পৃথিবীর বুকে একটি স্বর্গ। বর্ষার বড়ন্তি ঢেকে যায় ঘন সবুজ অরণ্যে। কোথাও বা ঘন সবুজ, কোথাও বা হালকা সবুজ পাহাড়ে রিম ঝিম ধারাতে ঝরে পড়া বৃষ্টির শোভা বড়ই আবেগজড়িত, বড়ই কল্পনাপ্রবণ। শীতকালে এখানকার মিঠে রোদে, প্রচণ্ড শীতে বিভিন্ন পাখিরা বড়ন্তি ভ্রমণে আসে। শীতের শেষে বসন্ত ঋতুর বড়ন্তির অরণ্যে যেন দাবানল লেগেছে। তবে এ দাবানলে অগুনের উত্তাপ নেই রয়েছে অজস্র লাল পলাশের আগুন রঙে রাঙানো রোমান্টিক অনুভূতি।

baranti

মুরাডি (Muradi) লেক। ছবি: –নিজস্ব চিত্র




তাই বসন্ত ঋতু এলেই মন যা বলতে চায় তা ব্যক্ত করতে পারি না। তাই কবি কাজী নজরুলের ভাষায় বলি

এই রাঙামাটির পথে লো
মাদল বাজে বাজে বাঁশের বাঁশি
ও বাঁশি বাজে বুকের মাঝে লো
মন লাগে না কাজে লো
রইতে নারি ঘরে আমার
প্রাণ হলো উদাসী লো

আসুন বড়ন্তি সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নিই। আমরা যারা বড়ন্তি যাই নি তারা যাতে সহজেই খুব শীঘ্রই যেতে পারি, যারা একবার ঘুরে এসেছি তারা তাদের স্মৃতিমন্থন করে নিতে পারি।



বড়ন্তি একটি ছোট্ট সাঁওতাল উপজাতীয় গ্রামের নাম। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর সাব ডিভিশনের সাঁতুরি ব্লকে অবস্থিত। পাহাড় ঘেরা গ্রাম বড়ন্তি। গ্রামটি পাশেই রয়েছে মুরাডি (Muradi) লেক। এই গ্রামটি এক দিকে পঞ্চকোট পাহাড় এবং অন্যদিকে বিহারীনাথ পর্বত দ্বারা পরিবেষ্টিত।

বড়ন্তি পশ্চিমবঙ্গের ক্রমবর্ধমান পর্যটন কেন্দ্র। এই স্থানটি জনপ্রিয় হয়েছে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে পাহাড় এবং জঙ্গল ট্র্যাকিংয়ের জন্য। মুরাদি এবং বড়ন্তি পাহাড়ের মাঝখানে ১ কি.মি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে সেচ প্রকল্প বাঁধ রয়েছে। রামচন্দ্রপুর সেচ প্রকল্পটি বড়ন্তির খুব নিকটবর্তী। বড়ন্তি থেকে জলাশয়টির বিশাল দৃশ্য দেখা যায়।

মুরাডি (Muradi) লেক। ছবি: –নিজস্ব চিত্র

জলাশয়টির অপর একটি দিক মুরাডি (Muradi)। সম্প্রতিকালে মুরাডি বেশ উন্নত হয়েছে। এখানে বেশ কিছু সরকারি এবং বেসরকারি থাকার বাসস্থান তৈরী হয়েছে। এটি রেল স্টেশনের কাছাকাছি। এখান থেকে জলাশয়টি আরো ভালো ভাবে দেখা যায়।

বড়ন্তি পাহাড়টির চারপাশ বাঁশ, সাল, পিয়াল, আমলকী, বহরা, হরিতকী, নিম প্রভৃতি গাছে ঘেরা। গ্রামটিকে ছবির মতো সুন্দর করে তুলেছে সারি সারি খেজুর গাছ। এছাড়া সমগ্র বড়ন্তি ঘিরে রয়েছে পলাশ বন। বসন্ত কালে পূর্ণিমার রাতে বড়ন্তি বড়ই রোমাঞ্চকর। পূর্ণিমার চাঁদের মিষ্ট অলোকে বড়ন্তির পাহাড়, জলাশয়, রাঙা পলাশের জঙ্গল এক নৈস্বর্গিক শোভা পায়। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য্য বড়ই রহস্যময়। চাঁদের অলোয় রাঙা পলাশ ফুলের রক্তিম আভা মনকে মাতাল করে তোলে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য্য শুধুই উপভোগ করার, যা হয়ত আমি আমার ভাষায় ব্যক্ত করতে পারছি না। রিসর্টে বসে অনেক অজানা বন্যের শব্দ শোনা যায়। বড়ন্তির শান্ত, স্নিগ্ধ সকালকে স্বাগত জানায় অসংখ্য পাখির কলরব। মুরাডি লেকে বড়ন্তির সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সুন্দর দৃশ্য অতি মনোরম।



এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা

এখানকার মানুষ অত্যন্ত সরল। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ বেশ দরিদ্র। পাহাড়ের কোলে জমি গুলিতে অল্প বিস্তর চাষাবাদ হয়। অনেক মানুষ জঙ্গলে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করে। খেজুর গাছের রস থেকে খেজুর গুড় বানিয়ে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমানে পর্যটন শিল্পের উন্নতির ফলে অনেকেই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল।

কি কি দেখবেন বড়ন্তিতে

ছোট্ট সবুজ পর্বত পটভূমিতে একটি বড় হ্রদের সৌন্দর্য্য । এছাড়াও আছে বন্য জীবনের রহস্যময় অনুভূতি।সন্ধ্যায় হরিণের শব্দ শুনতে পারেন। শীতকালে বিভিন্ন ধরনের পাখি দেখার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। এখানকার সাঁওতাল উপজাতীয় গ্রাম গুলি খুবই সুন্দর।

  • বড়ন্তি পাহাড়, পঞ্চকোট পাহাড় এবং বিহারীনাথ পাহাড়।
  • মুরাডি জলাধারে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত।
  • জঙ্গল ভ্রমণ (অবশ্যই দিনের বেলায় একজন গাইড নিয়ে)
  • লাল মাটির রাস্তা দিয়ে বাঁধ বরাবর মনোরম ভ্রমণ
  • মাছ ধরা এবং ট্রেকিং করা।
বড়ন্তিতে থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা

বড়ন্তিতে থাকা এবং খাওয়ার জন্য অনেক গেস্ট হাউস আছে। গেস্ট হাউস গুলির ব্যবস্থাপনা ভালই।

কিভাবে যাবেন বড়ন্তিতে




কলকাতা থেকে বাসে করে বড়ন্তি

ধর্মতলা বা করুণাময়ী থেকে ভলভো (valvo), সি.এস.টি.সি(C.S.T.C), ডব্লু.বি.এস.টি.সি (W.B.S.T.C) বাসে করে আসানসোল। সেখান থেকে ট্রেন পথে বড়ন্তি।

ট্রেন পথে বড়ন্তি

ট্রেন পথে আসানসোল। আসানসোল থেকে ট্রেনে করে মুরাডি স্টেশন। মুরাডি থেকে ৬ কি.মি দূরে বড়ন্তি গাড়িতে করে যেতে হবে।

আসানসোল থেকে সরাসরি গাড়িতে করে বড়ন্তি যাওয়া যায়। আসানসোল থেকে দূরত্ব প্রায় ৩৮ কি.মি, সময় লাগবে ১ ঘণ্টা।

হাওড়া খড়্গপুর লাইনে বাঁকুড়া হয়ে ট্রেন পথে আদরাতে। সেখান থেকে মুরাডি স্টেশনে। সেখান থেকে গাড়িতে করে বড়ন্তি।

আরও জনপ্রিয় খবর জানতে ক্লিক করুন
প্রাইভেট গাড়িতে করে বড়ন্তি

কলকাতা থেকে গাড়িতে করে ডানকুনি এক্সপ্রেস ধরে দুর্গাপুর। দুর্গাপুর থেকে আসানসোলের মধ্যে দিয়ে পুরানো জিটি রোড ধরে নিয়মতপুর। নিয়মতপুর থেকে বাঁদিকে বেঁকে ডিসেরগড় ব্রীজ পেরিয়ে সোজা বরাকর–পুরুলিয়া রোডে শর্বরি মোড়। শর্বরি মোড় থেকে রঘুনাথপুরের দিকে সুভাষ মোড়। মূল রাস্তা থেকে একটি রাস্তা বাঁদিকে গেছে, এই রাস্তা ধরে মুরাডি। মুরাডি গ্রামের শেষ প্রান্তে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের কাছ থেকে রাস্তা দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে। এক ভাগ গেছে সাঁতুরির দিকে আর এক ভাগ গেছে পাহাড়ের দিকে। ওই পাহাড়ের নীচ দিয়ে গিয়ে সামনে পড়বে বড়ন্তি ড্যাম। ড্যাম পেরিয়ে বাঁদিকের রাস্তা ধরে পড়ছে বড়ন্তি গ্রাম। এছাড়া দুর্গাপুর থেকে রানীগঞ্জ এসে বাঁদিকে ঢুকে মেজিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সোজা শালতোড়। শালতোড় থেকে রঘুনাথপুরের দিকে সাঁতুড়ি। সাঁতুড়ি ফরেস্ট অফিসের উল্টোদিকে ডানপাশে সুভাষ রোডের শুরু। এই পথ ধরে মূল রাস্তা থেকে ডানদিকে একটি রাস্তা ঢুকে গেছে তালবেড়িয়া গ্রামে। গ্রামের ভিতর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে বড়ন্তি পাহাড়ের নীচ দিয়ে।



সুনির্মল নীল আকাশ, ঘন সবুজ অরণ্য, জলাশয়ের গভীর গাঢ় নীল জলের স্পর্শের আবেগ রেখে পড়ন্ত বিকেলের মেঠো পথের অনবদ্য অনুভূতি নিয়ে শেষ করলাম বড়ন্তি।

আরও জনপ্রিয় খবর জানতে ক্লিক করুন

বিঃদ্রুঃ আপনাদের সুচিন্তিত মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করবে।

Comments

comments

এই সংক্রান্ত আরও খবর