চলে যান আমেরিকার গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নের একটি ক্ষুদ্র রূপ, পশ্চিম মেদিনীপুরের অভূতপূর্ব সুন্দর গনগনি।

আমরা যারা বেড়াতে ভালবাসি, অনেক অর্থ ব্যয় করে দূর দূর প্রান্তে বেড়াতে যাই, তাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত আমাদের আতি নিকটবর্তী গনগনির সম্বন্ধে জানা নেই। আমেরিকার গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নের একটি ক্ষুদ্র রূপ হল এই গনগনি(Gangani)।

gangani

পশ্চিম মেদিনীপুরের অভূতপূর্ব সুন্দর গনগনি। –নিজস্ব চিত্র

তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার স্মৃতিচারণ করেই বলছি

“বহু দিন ধরে, বহু ক্রোশ দূরে

বহু ব্যায় করি, বহু দেশ ঘুরে

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা

দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া

একটি ধানের শিষের উপর

একটি শিশির বিন্দু”

চলুন প্রকৃতির অমূল্য সৃষ্টি গনগনির সৌন্দর্য্য সম্বন্ধে জেনে নিই।

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা শহরের শিলাবতী নদীর তীরে রয়েছে এই চোখ ধাঁধানো গনগনি।

গনগনি শিলাবতী নদীর তীরে একটি প্রাকৃতিক পাহাড় যা খুবই জনপ্রিয় একটি  পিকনিক স্পট হয়ে উঠেছে। এটি একটি প্রাকৃতিক নদী উপকূল এবং মাটি ক্ষয় হওয়ার কারণে বিভিন্ন দর্শনীয় ধরনের গঠন তৈরী হয়েছে। এর ভৌগলিক গঠন অসাধারণ। ছোটনাগপুর মাল্ভূমি থেকে শিলাবতী নদীর উৎপত্তি।পশ্চিমবঙ্গের

Grand Canyon of Bengal, gangani

Grand Canyon of Bengal –নিজস্ব চিত্র

বাঁকুড়া,পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ ধরে বয়ে আসা শিলাবতী নদীর পথে ভূমিক্ষয় হয়ে গনগনিতে এই গভীর গিরিখাত তৈরী হয়েছে। এই গিরিখাতের ঢাল বয়ে গেছে নীচে নদীর দিকে, যে প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য তৈরী হয়েছে তা সাধারণভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রকৃতি দীর্ঘ সময় ধরে ধীরে ধীরে যে অভূতপূর্ব ভাস্কর্য তৈরী করেছে তা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। ভিন্ন ধরণের রঙের মাটি দিয়ে তৈরী হয়েছে এই ভাস্কর্য। প্রধানত লাল, হলুদ, হাল্কা হলুদ, সাদা রঙের মাটি দেখতে পাওয়া যায়।। প্রকৃতি বিভিন্ন ধরণের ভাস্কর্য তৈরী করেছে এখানে যেমন কোথাও মন্দির তৈরী হয়েছে, কোথাও দূর্গ তৈরী হয়েছে, কোথাও বা মনে হচ্ছে হাতির শুঁড়, কোথাও যেন সিংহ দাঁড়িয়ে আছে, কোথাও জাহাজ সবকিছুই অত্যন্ত জীবন্ত। কিন্তু সবটাই প্রকৃতির বানানো অদ্ভূত সৌন্দর্য যেখানে মানুষের হাতের ছোঁয়া নেই। তাই একদিনের জন্য ঘুরে আসুন গনগনিতে।


পশ্চিমবঙ্গের সমতল ভূমিতে অসাধারণ, ব্যতিক্রমী ভূদৃশ্য কে বাংলার প্রধান গিরিখাত (Grand Canyon of Bengal) হিসাবে ধরা হয়। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা একটি সিঁড়ি নির্মিত হয়েছে, যাতে কেউ সহজেই ক্যানিয়ন মধ্যে পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করতে পারেন।

 

কিভাবে যাবেন গনগনিতে?

সড়ক পথে:

যদি আপনি ‘পশ্চিমবঙ্গের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ দিকে বেরিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে কলকাতা থেকে NH-6 হয়ে ভায়া বাগনান হয়ে উলুবেড়িয়া যান। সেখানে থেকে দুটি ভিন্ন রুট আছে। চন্দ্রকোণা টাউন ভায়া ঘাটাল অথবা সালবনি ভায়া NH-60। অথবা কলকাতা থেকে প্রায় ১৩৬ কিমি গনগনি – সাঁতরাগাছি-আরামবাগ-গোঘাট  –কামারপুকুর-গড়বেতা-গনগনি।

ট্রেন পথে:
হাওড়া অথবা সাঁতরাগাছি থেকে ট্রেনে করে গনগনির নিকটবর্তী স্টেশন   গড়বেতা। সাঁতরাগাছি থেকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসে চেপে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গড়বেতা। সেখান থেকে ২.১ কিমি গনগনি।

বাসে করে:

ধর্মতলা থেকে বাসে করে গড়বেতা। সেখান থেকে ২.১ কিমি গনগনি।

গনগনিতে থাকার ব্যবস্থা নেই। সেখান থেকে মাত্র ২ কিমি দূরে গড়বেতায় থাকার অনেক হোটেল পাওয়া যায়। গড়বেতা শহরটিতে প্রয়োজনীয় সব জিনিসই পাওয়া যায়।

Comments

comments

এই সংক্রান্ত আরও খবর