পদ্মাবতী নিয়ে কেন এত হিংসা, জেনে নিন পদ্মাবতীর ঐতিহাসিক কাহিনী
এই বৃহস্পতিবার ২৫.০১.২০১৮ ‘পদ্মাবত’(Padmavat) ছবিটির রিলিজ। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গুজরাট ও রাজস্থানের পদ্মাবতী (Padmavati) স্ক্রিনিং নিষিদ্ধের নির্দেশে চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। আমেদাবাদে বহু সংখ্যক মাল্টিপ্লেক্স এবং mall এর সামনে উত্তেজিত জনতার ভিড় তৈরী হয়।সড়ক অবরোধ হয় এবং পার্কে গাড়িগুলি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।পুলিশ শূণ্যে গুলি চালিয়ে জনতার ভিড় হাল্কা করে।
‘পদ্মাবতী’ থেকে ‘পদ্মাবত’ -অবশেষে অনেক প্রতীক্ষার পর মুক্তি পাচ্ছে।
‘পদ্মাবতী’ ছবিটি ঐতিহাসিকদের একটি বিশেষ বেঞ্চ স্ক্রিন করে, যারা পাঁচটি সংশোধনী প্রস্তাব করেছিলেন যার মধ্যে ‘পদ্মাবতী’ থেকে ‘পদ্মাবত’ এই শিরোনামে পরিবর্তনের প্রস্তাব ছিল।
‘পদ্মাবতী’ চলচ্চিত্রটি ১৪ তম শতাব্দীর উচ্চ রাজপুতদের হিন্দু রাণী এবং মুসলিম শাসক আলাউদ্দিন খিলজির গল্প।
‘পদ্মাবত’ চলচ্চিত্রটির পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভানসালি, দীপিকা পাড়ুকোন রানী পদ্মাবতীর চরিত্রে, শহিদ কাপুর মহারাজা রাওল রতন সিং এবং রণবীর সিং সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির চরিত্রে।
পদ্মাবতীর ঐতিহাসিক কাহিনী
গান্ধবের রাজা গন্ধর্ব সেন, তার মেয়ের নাম পদ্মাবতী।তার একটা পোষা তোতা পাখী ছিল। পাখীটির নাম হীরামন। পাখীটার সাথে রাজকুমারী পদ্মাবতীর খুব বন্ধুত্ব ছিল। হীরামন এবং পদ্মাবতী দুজনেই দুজনের সাথে কথা বলত। তারা খুব ভালো বন্ধুও ছিল। কিন্তু তোতা পাখীদের সঙ্গে রাজকুমারীর বড় হওয়া রাজা গন্ধর্ব সেনের পছন্দ ছিল না। রাজা পাখীটাকে মারতে উদ্দত হওয়ায় রাজকুমারী পাখীটাকে উড়িয়ে দেন, পাখীটা প্রাণ বাঁচাতে পালাতে চেষ্টা করে, কিন্তু পালাবে কোথায় ? সে ধরা পড়ল এক বেদের কাছে। সেই বেদ পাখীটাকে বিক্রী করল এক ব্রাহ্মণের কাছে এবং ব্রাহ্মণ বিক্রী করল চিতোরের রাজা রতন সিং এর কাছে। রাজা পাখীটার কাছে রাজকুমারীর নাম, তার সৌন্দর্য্যের কথা বার বার শোনেন। রাণীর সৌন্দর্য্যের কথা রাজা রতন সিং মনে মনে তাকে বিবাহ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। এরপর চিতোর রাজ ১৬০০০ সৈন্য নিয়ে সিংহলে যান। সিংহল রাজ্যের একটি মন্দিরে রাণী পদ্মাবতীকে পাওয়ার আসায় তপস্যা করতে শুরু করেন। এই খবরটি তোতা পাখীটি রাণী পদ্মাবতীকে জানায়। রাজকুমারী পদ্মাবতী রাজা রতন সিং এর সঙ্গে দেখা করার জন্য উৎসাহিত হয়ে পড়েন। অনেক দিন তপস্যা করার পর রাজকুমারী পদ্মাবতীর দেখা না পেয়ে রতন সিং আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। তখনই হঠাৎ স্বয়ং শিব পার্বতী রাজা রতন সিং এর সামনে আসেন এবং তার মনোবল বাড়ান।
এরপর রাজা রতন সিং সিংহল রাজ্যে হামলা করেন, কিন্তু যুদ্ধে হেরে গিয়ে তার সেনারা বন্দী হয়। সিংহল রাজ যখন শুনলেন যিনি তপস্যা করতে এসেছিলেন তিনি চিতোরের রাজা রতন সিং, তখন তার কন্যার সঙ্গে বিবাহ দিলেন। পদ্মাবতী চিতোরে এলেন রাজরানী হয়ে। সেই সময়ে রাজার এক অনুচর যার নাম রাঘব চেতন, বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য রাজা তাকে রাজ্য থেকে নির্বাসিত করেন। তারপর রাঘব চলে গেল দিল্লীর সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর কাছে। আলাউদ্দিন খিলজীকে পদ্মবতীর অসাধারণ সৌন্দর্য্যের কথা বলে সে। এরপর আলাউদ্দিন খিলজী চিতোর রাজ্য আক্রমণ করেন। কিন্তু চিতোরের অভূতপূর্ব, উন্নত মানের প্রাসাদে ঢুকতে অক্ষম হন।চতুর আলাউদ্দিন খিলজী চিতোরের রাজাকে একটি চিঠি লেখেন, তিনি একবার রাণী পদ্মাবতীকে দেখে দিল্লী ফিরে যাবেন। রাজা রতন সিংহ নিরুপায়, কারণ চিতোরের প্রজাদের সুরক্ষার ভার তাঁর উপর। তাই তিনি বুদ্ধি দিয়ে একটি পরিকল্পনা করলেন। খিলজী এবং তার কিছু সৈন্যদের প্রাসাদে প্রবেশ করার অনুমতি দেন, এবং প্রাসাদের সবচেয়ে উঁচু স্থানে বসার অনুমতি দেন। সেখান থেকে একটি জলাশয়ে রাণীর প্রতিবিম্ব দেখান। রাণীর প্রতিবিম্ব দেখে খিলজী রাণীর প্রেমে পাগল হয়ে যান। চতুর খিলজী তার কথা মতো দিল্লী ফিরে যান কিন্তু যাবার পথে চিতোরের রাজা রতন সিংকে দিল্লীতে বন্দী করে নিয়ে যান।
খিলজী দিল্লী থেকে রাণীকে একটি চিঠি লেখেন, যাতে বলা হয় যদি রাণী পদ্মাবতী তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেন তাহলে খিলজী রতন সিং কে মুক্তি দেবেন। রাণী রতন সিংকে উদ্ধার করার জন্য খিলজীকে সমর্থন করে চিঠির উত্তর দেন কিন্তু একটি শর্ত দেন যে তাঁর সাথে পাল্কীতে করে হাজার দাসী যাবে। খিলজী রাজি হয়ে যান। খিলজীর কুমনোভাব রাণী জানতেন তাই তখন রাণী পদ্মাবতী তার সেনাদের পাল্কীতে করে নিয়ে গেলেন এবং অতি সন্তর্পণে রাজা রতন সিং মুক্ত করে নিয়ে আসেন চিতোরে। চিতোরে ফিরে রাজা দেবপালের সঙ্গে রতন সিং এর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে রাজা রতন সিং এবং দেবপাল দুজনেরই মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এখানেই গল্পের শেষ নয়, রাণীর সৌন্দর্য্যকে পেতে খিলজী আবার চিতোর আক্রমণ করেন। সব পথ অবরুদ্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধে চিতোরের অনেক সেনা প্রাণ হারায়। শেষে চিতোরের নারীরা ঠিক করলেন, তাদের সম্মাণ রক্ষার্থে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ দেবে। কোন বিদেশী শক্তির হাতে নিজেদের সমর্পণ করবে না।এবং হলও তাই। খিলজী যখন দুর্গে প্রবেশ করল, দেখল সবই নিশ্চিহ্ন, সবই শেষ, শুধু পড়ে আছে কিছু মৃতদেহ, শুধু ছাই, পোড়া মাংস। রাজপুতরা যেমন তাদের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে লড়াই করেছে একই ভাবে রাণী পদ্মাবতী তাঁর আত্মত্যাগের মাধ্যমে চিতোরের সম্মাণ রক্ষা করেছেন। তাই চিতোর, রাজপুতানার সমস্ত যায়গায় তাঁকে দাবী হিসাবে কল্পনা করা হয়। এই গল্পটি মালিক মহম্মদ জায়সির ‘পদ্মাভত’ থেকে লেখা।
অনেক রাজপুত গোষ্ঠী ভানসালির চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলেছে, অভিযোগ করেছে যে, রানী পদ্মাবতী ও আলাউদ্দিন খলজির মধ্যে রোমান্টিক স্বপ্নের অনুকরণের মাধ্যমে এটি ইতিহাসকে বিকৃত করেছে, কিন্তু ভানসালি একাধিকবার দাবি অস্বীকার করেছেন।