এই সহজ অভ্যাস গুলি থেকে আপনিও পারেন ক্যান্সার প্রতিহত করতে

আপনি কি জানেন যে ৩০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য? আজ এটা প্রমাণিত যে ক্যান্সারের জন্য আমাদের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে শুধুমাত্র জিনগত কারণেই যে ক্যান্সার হয় তা নয়, আমাদের জীবনধারাও একটা কারণ।
তাই বেশ কিছু খুঁটিনাটি স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাসের দিকে আমরা নজর দিচ্ছি যা কিছুটা হলেও ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

Prevent cancer
সানক্রিম ব্যবহার করুন

প্রতিদিন কর্মসূত্রে যারা রৌদ্রে বেরোন তারা চেষ্টা করবেন UVA এবং UVB সানস্ক্রিনের দৈনিক প্রয়োগ (এসপিএফ ১৫ বা তারও বেশি) করতে। এটি সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মিকে প্রতিরোধ করবে।
সানস্ক্রিন মেলানোমা বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয় যা- মারাত্মক স্কিন ক্যান্সারের আকার নেয়। তাই স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার অত্যন্ত ফলপ্রদ এবং কার্যকরী।

সরাসরি সূর্যালোক এড়িয়ে চলুন

সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত সরাসরি সূর্যালোক এড়িয়ে চলুন। এইসময় সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির বিচ্ছুরণ সবচেয়ে বেশী ঘটে। ছাতা, পুরো শরীর ঢাকা দেওয়া পোশাক, সানগ্লাস, টুপি প্রভৃতি ব্যবহার করলে কিছুটা হলেও স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যাবে।

জল

মিষ্টি পানীয় জল(যেমন সোডা জল)অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ায়। কোলা জাতীয় পানীয় পান করার প্রবণতা ত্যাগ করুন, শুদ্ধ জল পান করুন। জল পান করার জন্য বা জল ধরে রাখার জন্য যতটা সম্ভব প্লাস্টিকের বোতল ত্যাগ করুন। যদি প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার অপরিহার্য হয় তাহলে BPA-free বোতল ব্যবহার করুন।

ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম করুন। গবেষণায় দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে ব্যায়াম আমাদের শরীরে ১৩ ধরণের ক্যান্সারের প্রবণতা কমায়। তাই নিয়মিত ব্যায়াম আপনার হার্টের পাম্পিং রেট ঠিক রাখবে এবং শরীরে রক্তচলাচলের হার ঠিক রাখতে সাহায্য করবে যা আপনার ফুসফুস, কিডনি, কোলোরেকল, স্তন প্রভৃতি আরও অঙ্গকে ক্যান্সারের হাত থেকে প্রতিহত করবে।

ড্রাগের কবল থেকে বিরত থাকুন

গবেষণায় দেখা গেছে যে সমস্ত যুবকরা গাঁজা সেবন করেন তাদের বেশিরভাগের মধ্যেই টেস্টিকুলার ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ছে। স্টেরয়েড আরেকটি মাদক যা আমাদের দেহে ক্ষতবিক্ষত করে দিতে পারে, এটি যকৃতের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।এই ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করার একটি সহজ উপায় মাদক মুক্ত থাকুন।

অ্যালকোহলের মাত্রা সীমিত করুন

অ্যালকোহল ব্যবহারের ফলে আমাদের মুখে, গলা, ইসোফেগাল, লিভার, কোলন, রেকটাল, স্তন, অগ্ন্যাশয় এবং পেটের ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির গবেষকরা নির্ধারণ করেছেন যে যত বেশী অ্যালকোহল পান করবেন যেকোন ধরণের ক্যান্সারের প্রবণতা তত বাড়বে। তাই মদ্যপান বন্ধ করে নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।


নিরাপদ যৌন সম্পর্ক অনুশীলন করুন

যৌন সংক্রামিত রোগগুলি যেমন HPV (human papillomavirus) – এই ভাইরাসটি মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভাশয়ের ক্যান্সারের (cervical cancer )ঝুঁকিকে বৃদ্ধি করে এবং পুরুষদের penile cancer হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। HIV/AIDS এই ধরণের সংক্রামক রোগী যদি বিনা চিকিৎসায় থেকে যায় তাহলে লিম্ফোমা (lymphoma) হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। অরক্ষিত oral s** মুখ এবং গলার ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই এই ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রতিহত করার জন্য একটি নিরাপদ যৌন সম্পর্ক অনুশীলন করুন।

তামাক নেওয়ার অভ্যাস দূর করুন

আপনি কি জানেন যে ধূমপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাড়াতাড়ি মৃত্যুর ১ নম্বর কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়? অকালে মৃত্যুর এই কারণটি পরিহারযোগ্য। তামাক জনিত মৃত্যুর প্রায় ৩৬ শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সার, মুখ, গলা এবং আরও অনেক স্থানের ক্যান্সারের ফলে ঘটে। তামাক চেবানো মোটেই ভাল নয় কারণ এটি মুখ, জিহ্বা, গাল এবং মাঢ়ীর ক্যান্সারের পাশাপাশি অগ্ন্যাশয় ও এসোফেগাল ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ হিসাবে পরিচিত।

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন

গবেষণায় দেখা গেছে যে শরীরে বেশী চর্বিযুক্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন এন্ডোমেট্রিয়াল,এক্সোফেজাল,লিভার,কিডনি, অগ্ন্যাশয়,কোলোরেক্টাল,স্তন,গলব্লাডার,ডিম্বাশয় ও থাইরয়েড ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার বিকাশের সম্ভাবনা বেশি। তাই শ্রীরের ওজন অতিরিক্ত হলে তা কমাবার চেষ্টা করুন।

গ্রীল করা খাবারের অভ্যাস সীমিত করুন

গ্রীল করা খাবার থেকে শরীরে কার্সিনোজেন(carcinogen) প্রবেশ করার সম্ভাবনা প্রবল। যে সমস্ত খাদ্য উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত হয়, সেই খাদ্যের সম্ভাব্য ডিএনএ পরিবর্তনশীল অণুগুলি আমাদের পাকস্থলিতে প্রবেশ করে। এর থেকে স্তন, লিভার, কোলন, ত্বক, ফুসফুস এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার হতে পারে।গ্রীল করা খাবারে HCA এবং PAAH অত্যধিক পরিমাণে থাকে যার লিউকেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

অনেক বেশী পরিমাণে ফল এবং সব্‌জী খান

আমাদের খাদ্য তালিকাতে ফল এবং সব্‌জী অনেক বেশী পরিমাণে থাকতে হবে কারণ ফল এবং সব্‌জীর পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশী যা হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের প্রতিরোধে সাহায্য করে।

প্রক্রিয়াজাত এবং প্রি-প্যাকেজ খাদ্যগুলি নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখুন

প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed food) গুলির মধ্যে সংরক্ষণকরী বস্তু(preservatives) দেওয়া থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের অনেকাংশে ক্ষতি করে, এটি যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।
যারা অত্যন্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপর নির্ভরশীল তারা তাজা ফলের ও সবজির ভিটামিন ও পুষ্টি সম্পূর্ণ রূপে পায় না ,তাদের সামগ্রিক ফাইবার খাওয়া খাওয়া হয় না, যার ফলে কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের খাদ্যতালিকায় চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখার একটি উপায় হল তাজা সব্‌জী (veggies) এবং ফল যোগ করা।

প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলুন

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির রিপোর্ট অনুযায়ী যে প্রক্রিয়াজাত মাংস পরিমাণ প্রচুর পরিমাণে কলোরেকটাল ক্যান্সারের (colorectal cancer) ঝুঁকি বাড়ায়, সম্ভবত এই খাবার গুলির মধ্যে নাইট্রাইট যোগ করা হয় এবং সেই কারণে এই ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

নিয়মিত ভাবে স্বাস্থ্যের পরীক্ষা (check up)করান

আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর পরিবর্তনগুলি যা ক্যান্সারের সাথে যুক্ত হতে পারে সেটা জানাতে একজন general practitioner এর কাছে বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। ডাক্তাররা জানেন কিসের সন্ধান করতে হবে, এবং ক্যান্সারের স্ক্রীনিং কেবল তাদের একটি উপায় যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, প্রাথমিক সনাক্তকরণটিও রোগীর পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে।

নিজেকে অনাক্রম্য(Immunized) করুন

বেশ কয়েকটি রোগের প্রতিষেধক হিসাবে vaccination যথেষ্ট কার্যকরী। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগ ভ্যাকসিনকে “অনেক গুরুতর রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা” জন্য ব্যবহার করেন।
প্যাপিলোমাভাইরাস এবং হেপাটাইটিস ‘বি’ দ্বারা সৃষ্ট গুরুত্ত্বপূর্ণ মলদ্বার, গলা এবং লিভারের ক্যান্সারের প্রতিরোধে সহায়ক HPV এবং HBV ভ্যাকসিন যা আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্টের মাধ্যমে সহজেই পেতে পারেন।

আপনার শরীরের সাথে পরিচিত থাকুন

ক্যান্সারের প্রথম লক্ষণ প্রায়ই মনোনিবেশী রোগীদের দ্বারা ধরা পড়ে যারা তাদের শরীরের কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে তারা তাদের স্তনে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাশয়ে কোন রকম ফোলা ভাব অছে কিনা অথবা গঠনে কোন পরিবর্তন দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের দারস্থ হবেন।

বিশুদ্ধ বাতাস যেখানে সেখানে বসবাস করার চেষ্টা করুন

অত্যাধিক সময় দূষিত বাতাসের মধ্যে শ্বাস নিলে শুধু যে ফুস্ফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই নয় ব্লাডার ক্যান্সারেরও ঝুঁকি বাড়ে। আমাদের যতটা সম্ভব বিশুদ্ধ বাতাস যুক্ত যায়গায় বসবাস করা উচিৎ। যদিও বাস্তবে সবার ক্ষেত্রে তা সম্ভ হয় না।

চাপ মুক্ত থাকুন

চাপের সঙ্গে ক্যান্সারের সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই। তবে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে যে চাপ আমাদেরকে ধূমপান, মদ্যপান ও মাদকের মতো অপ্রতিরোধ্য আচরণ তৈরি করতে পারে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সহজ সরল জীবন যাপন করুন, যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাথতে সাহায্য করবে।

Comments

comments

এই সংক্রান্ত আরও খবর