জেনে নিন হোলির পৌরাণিক এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

শীতের আড়ালে আসে নবীন বসন্ত। শীতের পাতা ঝড়া বৃক্ষ যেমন বসন্তের বাতাসের ছোঁয়ায় সবুজ হয়ে ওঠে তেমনি ফাগুন পূর্ণিমার দোল দিয়ে শুরু হয় আবির রাঙা বসন্ত।দোল হিন্দু ধর্মানুষ্ঠান। দোল উৎসবটির উৎস প্রাচীন কালে। প্রকৃতপক্ষে, চতুর্থ শতাব্দীর কবিতাতে দোল উৎসব পালনের উল্লেখ আছে। দোল উৎসবের উল্লেখ প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থে পাওয়া যায়। এই উৎসবের শুরু কিভাবে হয়েছিল তার অনেক ধরণের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। সর্বাধিক জনপ্রিয় কাহিনীগুলি হলো হোলিকা দহন এবং রাধা-কৃষ্ণ।

হোলিকা দহন
holi

ছবি: EYE FRAMES Click-O-graphy

হিরণ্যকশিপু নামে এক অত্যাচারী রাজা ছিলেন। তিনি খুব অহংকারী ছিলেন। অহংকারের বশে তিনি নিজেকে ভগবানের সমকক্ষ ভাবতে শুরু করেন। তাঁর প্রজারা তাঁর অত্যাচারের ভয়ে তাঁকে ভগবান মানতে শুরু করে, কিন্তু তার পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত। প্রহ্লাদ তার বাবা রাজা হিরণ্যকশিপুকে ভগবান বলে মানতেন না। তাই হিরণ্যকশিপু তার রাক্ষসী বোন হোলিকাকে দায়িত্ব দিলেন প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য। এদিকে রাক্ষসী হোলিকা বরপ্রাপ্ত ছিল যে আগুনে পুড়ে তার কখনো মৃত্যু হবে না। তাই হিরণ্যকশিপুর নির্দেশে হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনের মধ্যে বসে পড়ে, কারণ সে জানে আগুনে পুড়ে তার মৃত্যু হবে না। ভক্ত প্রহ্লাদ কিন্তু অগ্নিদগ্ধ হননি।প্রহ্লাদের সত্যিকারের ভক্তিতে ভগবান বিষ্ণু তাকে রক্ষা করেন, কিন্তু হোলিকা তার প্রাপ্ত বরের অন্যায় প্রয়োগ করায় আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই দিন থেকে ফাগুন পূর্ণিমাতে হোলি তথা দোল উৎসব পালিত হয়। দোল অন্যায়কে দমন করে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার দিন।


হোলিকা দহন উৎসবটি দোলের আগের দিন রাত্রে হয়। যা আমাদের পশ্চিমবাংলাতে ন্যাড়া পোড়া নামে প্রসিদ্ধ। বিভিন্ন ধরণের পাতা যেমন নারকেল পাতা, সুপারী পাতা প্রভৃতি জড়ো করে তাতে আগুন ধরানো হয়। এই অগ্নিকুণ্ডের অর্থ হল দুষ্টকে দমন করে ভালোর প্রতিষ্ঠা করা। নিজের মনের মধ্যে যে পাপ বোধ আছে তা এই অগ্নিতে বির্সজন দেওয়া।

আরও জনপ্রিয় খবর জানতে ক্লিক করুন
রাধা কৃষ্ণের কাহিনী

কৃষ্ণ ছিল কালো। রাধা ছিল গৌর বর্ণা। কৃষ্ণ তার কালো রঙের জন্য রাধার প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিল। এই কারণে কৃষ্ণ রাধার ফর্সা রঙ মুছে ফেলার জন্য তার উপর রং প্রয়োগ করেন। রাধা কৃষ্ণ একে অপরকে রাঙিয়ে তাদের মধ্যে প্রেম নিবেদন করেন, তারপর থেকে দোলের দিনটি রঙ দিয়ে রাঙিয়ে রাধা কৃষ্ণের প্রেমের চিহ্ন রূপে পালিত হয়।

holi history

ছবি: EYE FRAMES Click-O-graphy

দোলের বৈজ্ঞানিক কারণ

দোল বসন্ত ঋতুতে খেলা হয় যা শীত ও গ্রীষ্মের মাঝখানে আসে। বসন্তকালে আবহাওয়ার রূপান্তর ঘটে। এই সময় বায়ুমণ্ডল এবং শরীরের মধ্যে নানা প্রকার ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। তাই দোলের আগের দিন হোলিকা দহন তথা ন্যাড়া পোড়া পালন করা হয়। কারণ ন্যাড়া পোড়াতে যে অগ্নিকুণ্ডটি জালানো হয় তাতে ৫০-৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেই তাপে কাছাকাছি বাতাসের মধ্যেকার এবং আমাদের শরীরের ব্যাকটিরিয়া নষ্ট হয়।।
দেশের কিছু অংশে, হোলিকা দহনের পর মানুষ কপালের উপর ছাই মাখে এবং তার সাথে চন্দন মিশ্রিত করে। আমের মুকুল বা মঞ্জরি খায়। এটি সংক্রামক বিরোধী রূপে কাজ করে।

Comments

comments

এই সংক্রান্ত আরও খবর